স্থাপত্য:-
স্থাপত্য হল নির্মাতা, ছুতার, রাজমিস্ত্রি দ্বারা তৈরি বিভিন্ন মন্দির, মসজিদ, স্মৃতিসৌধ, ঘর বাড়ি, দালাল এবং অন্যান্য বাস্তব কাঠামো নির্মাণ প্রক্রিয়া ও কাজ। এগুলির বানানোর কারিগর কে স্থাপত্য শিল্প বলে।
উদাহরণ:-
সোমপুর মহাবিহার, তাজমহল, অজন্তা ও ইলোরার গুহা, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয়, আলাই দরওয়াজা প্রভৃতি।
ভাস্কর্য:-
ভাস্কর্য হলো মানুষের তৈরি মন্দির মসজিদের গায়ে খোদাই করা বিভিন্ন কারুকার্য, গুহাচিত্র, নকশা প্রভৃতি অজন্তা ইলোরা গুহাচিত্র, তাজমহল, কুতুব মিনারের গায়ে খোদাই করা বিভিন্ন কারুকার্য ইত্যাদি ভাস্কর্যের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
স্থাপত্য ভাস্কর্য প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে স্বীকৃত। দেশের সভ্যতা সংস্কৃতির মান বুঝতে এ ধরনের উপাদান অপরিহার্য। মাটির তলা থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নবস্তু যথা-
জীবন্ত দলিল:-
মৃৎপাত্র তথা টেরাকোটার নিদর্শনসমূহ, পাথর অথবা অন্য কোন ধাতব মূর্তি এবং স্থাপত্য ভাস্কর্যের নানা নিদর্শন প্রভৃতি হল বাস্তব ভিত্তিক উপাদান। কেননা, এই সকল উপাদান গুলিতে কোনো ধরনের ভেজাল দেওয়া যায় না। সাহিত্যগত তথ্যগুলি ব্যবহারের সময় যেমন বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন এর প্রয়োজন হয়, বস্তুগুলির ক্ষেত্রে সে ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয় না।
খনন কার্যের ফলে প্রত্নবস্তু গুলি একেবারে অবিকল অবস্থায় প্রত্নতাত্ত্বিকদের হাতে এসে পৌঁছায়। এর ভিত্তিতে প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকদের সমন্বয়ে উন্মোচিত হয় ইতিহাসের নতুন দিগন্ত।
প্রাপ্তিস্থান:-
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ইতিপূর্বে খনন কার্যের ফলে আবিষ্কৃত তথ্যাদি ছাড়াও সাম্প্রতিককালে উত্তর 24 পরগনা জেলার চন্দ্রকেতুগড় এবং বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের খননকার্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যাদি উক্ত ধারণার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে বাংলার ইতিহাস রচনায় মঙ্গলকোটের প্রত্নবস্তু সম্পর্কে এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
ইতিহাসের এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলি কেবলমাত্র খননকার্যের ফলেই জানা সম্ভব হয়েছে। এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হল হরপ্পা সভ্যতা ।হরপ্পা সভ্যতা যে নগর কেন্দ্রিক ছিল সুদূর প্রাচীনকালে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় ভারতবর্ষেও যে উন্নত মানের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তা হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, লোথাল (গুজরাট) কালিবঙ্গান (রাজস্থান) প্রভৃতি অঞ্চলে ক্ষয়কার্যের ফলে জানা সম্ভব হয়েছে।
শুধু হরপ্পা সভ্যতার ক্ষেত্রেই যে এ কথা প্রযোজ্য তা নয়, তক্ষশীলা, সারনাথ অথবা রাজগীর প্রভৃতির ক্ষেত্রেও একথা সত্য। খনন কার্যের ফলে যে ইতিহাসের নতুন দিকের সন্ধান মেলে তার দু-একটি উদাহরণ রাখা যেতে পারে।
সাম্প্রতিককালে চন্দ্রকেতুগড়ে আনুমানিক খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীর একটি পোড়ামাটির নিদর্শন পাওয়া গেছে, যাতে একজন ব্যক্তি এবং একটি কচ্ছপের ছবি দেখা যায়। এই ব্যক্তির আবির্ভাব থেকে মনে হয় যে, তিনি বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন। বলাবাহুল্য, এই ধরনের নিদর্শন বাংলার ইতিহাসে বিশেষ পাওয়া যায় না।
অতিসম্প্রতি ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চ ও এপ্রিল মাসে যথাক্রমে পশ্চিমবাংলার দক্ষিণ 24 পরগনার গোসাবা থানায় এবং মধ্যপ্রদেশের সাঁচী-সাতধারা এলাকায় নতুন আবিষ্কারের কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বন ও পরিবেশ দফতরের কর্মীরা গোসাবা থানা এলাকায় ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধীন সংরক্ষিত বনাঞ্চলে মাটি খুড়তে গিয়ে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় -পঞ্চম শতকের কিছু দুর্লভ প্রত্ন নিদর্শন পান। এগুলির মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য হল, পবিত্র পদচিহ্নের অনুকৃতি একটি সূর্য মূর্তি এবং গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের শ্রী বিক্রম স্বর্ণমুদ্রা। উল্লেখ্য যে, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে সুপ্রচলিত পবিত্র পদচিহ্নের উপাসনার নিদর্শন এবং গুপ্তসম্রাটের ওই ধরনের স্বর্ণমুদ্রা এই অঞ্চলে এর আগে বিশেষ পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে সাঁচী-সাতধারা এলাকায় নতুন চৌদ্দটি বৌদ্ধ মঠ ও ৩২ টি স্তুপ আবিষ্কৃত হয়েছে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পুরাতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম কর্তৃক তে দুইটি বৌদ্ধমঠ আবিষ্কৃত হয়েছিল সেগুলির সঙ্গে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের এই আবিষ্কার এক নতুন সংযোজন।
এই আবিষ্কার শুধু যে প্রাচীনকালে মধ্য ভারতের বৃহত্তম বৌদ্ধ বসতির উপর আলোকপাত করেছে তাই নয়, গাছ ও লতা গুল্ম লাগিয়ে কিভাবে ভূমিক্ষয় রোধ করা হয় তা যে সে যুগে (খ্রিস্টপূর্ব কয়েক শতাব্দী থেকে যিশুখ্রিস্টের জন্মের পরের কয়েক শতাব্দি পর্যন্ত )জানা ছিল, এই আবিষ্কার থেকে তা-ও বোঝা যায়।
0 Comments