Ticker

6/recent/ticker-posts

নেহেরু রিপোর্ট (১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ)



ভূমিকা:-

   সাইমন কমিশনে কোন ভারতীয় সদস্য গ্রহণ না করায় ভারতবাসী সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। তখন ভারত সচিব "লর্ড বার্কেন হেড” "বড়লাট আরউইন" বলেন- "সংবিধান রচনা করার মত যোগ্যতা ভারতীয়দের নেই"। 

  এই বক্তব্যকে ভুল প্রমাণ করার জন্য জাতীয় কংগ্রেস মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বে গঠিত এক কমিটির উপর দায়িত্ব দেওয়া হয় ভারতের নতুন শাসনতন্ত্রের মূল নীতিগুলির খসড়া রচনার। মতিলাল নেহেরুর নাম অনুযায়ী এই রিপোর্ট "নেহেরু রিপোর্ট” নামে পরিচিত। 

   এই রিপোর্ট পাস হয় হাজার ১৯২৮‌ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে সর্বদলীয় লখনৌ অধিবেশনে। এই রিপোর্টের সাথে এক প্রস্তাব নেওয়া হয় যে, এক বছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে "নেহেরু রিপোর্ট” মেনে না নিলে কংগ্রেস পুনরায় আন্দোলনে নামবে। এই রিপোর্টে "ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস” ভারতের লক্ষ্য বলে ঘোষণা করা হয়।


কমিটি গঠন:- 

   ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই ফেব্রুয়ারি ডঃ এম.এ. আনসারীর সভাপতিত্বে দিল্লিতে একটি সর্বদলীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে মতিলাল নেহেরুর নেতৃত্বেজনের একটি কমিটি গঠন করা হয়।যা "নেহেরু কমিটি” নামে পরিচিত।

    অন্য সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- কংগ্রেসের সুভাষ চন্দ্র বসু, মুসলিম লীগের আলী ইমাম ও সাহেব কুরেশি, হিন্দু মহাসভার এম. এস. অ্যানে এবং এম.আর.জয়াকার, শিখ সম্প্রদায়ের সর্দার মঙ্গল সিং প্রমূখ।


নেহেরু রিপোর্টের সুপারিশ:- 

   ১) অবিলম্বে ভারতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত রেখেই ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।

২)  কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো ভারতকেও  পূর্ন ডোমিনিয়নের মর্যাদা দিতে হবে।

৩)  ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামো গড়ে তুলতে হবে অর্থাৎ কেন্দ্রীয় প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৪)  দায়িত্বশীল সরকার গঠনের জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠন করতে হবে।

৫)  জনগণের জন্য পেশা, ধর্ম আচরণ  প্রভৃতি ক্ষেত্রে ১৯ টি মৌলিক অধিকার থাকবে।

৬)  কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের নিম্নকক্ষ ও প্রাদেশিক আইন পরিষদ গুলির সদস্যরা জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হবেন।

৭)  হিন্দু, মুসলমান ও বিভিন্ন সম্প্রদায়কে নিয়ে যৌথ নির্বাচন নীতি গ্রহণ করতে হবে।

৮)  ভাষাভিত্তিক বিভিন্ন প্রদেশ গঠন করতে হবে।

৯)  কেন্দ্র ও অমুসলমান প্রধান প্রদেশে লোক সংখ্যার ভিত্তিতে সংখ্যালঘুদের ১০ বছরের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকবে।

১০)  শাসন বিভাগের ওপর আইনসভার পূর্ণ কর্তৃত্ব  থাকবে।

১১)  সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতিক সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।


নেহেরু রিপোর্টের প্রতিক্রিয়া:-

   নেহেরু রিপোর্টকে  কেন্দ্র করে কংগ্রেসের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হয়। গান্ধীজীর নেতৃত্বে একদল এই রিপোর্টকে সমর্থন করলেও জহরলাল নেহেরু, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমূখ তরুণ নেতাগন চেয়েছিলেন ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বাধীনতা।

    ফলে গান্ধীজী বলেন, আপোষের লক্ষ্যে এক বছরের মধ্যে গ্রেট ব্রিটেনকে নেহেরু প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে, না হলে কংগ্রেস পুনরায় অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করবে। সম্মেলনে  প্রবীণ নেতৃবৃন্দ সকলেই উপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি সমর্থন করেন। 

   তবে এই রিপোর্টে সাম্প্রদায়িক সমস্যার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া না হওয়ায় মুসলিম লীগ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ২২ শে ডিসেম্বর কলকাতায় সর্বদলীয় সম্মেলনে মহম্মদ আলী জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লীগ নেহেরু রিপোর্ট সংশোধনের প্রস্তাব করে। তাছাড়া শিখ সম্প্রদায় ও অনুন্নত হিন্দু সমাজের কোন কোন প্রতিনিধিও খসড়াটির বিরোধিতা করেন।

Post a Comment

0 Comments