Ticker

6/recent/ticker-posts

লখনৌ চুক্তি(১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ)


পটভূমি:- 

   প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুরস্ক জার্মানির পক্ষে ও ব্রিটিশদের বিপক্ষে অংশগ্রহণ করে। তুরস্কের সুলতান ছিলেন ইসলাম জগতের খলিফা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ড তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে ভারতবর্ষের মুসলিম সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে মোহাম্মদ আলী জিন্না মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের এই ক্ষোভ আরো তীব্র রূপ ধারণ করে।

   সুযোগ বুঝে জিন্না এই সময় হিন্দু মুসলমান ঐক্য প্রতিষ্ঠায় অগ্রনি হন। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ একথা উপলব্ধি করেন যে, হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য বৃদ্ধি পেলে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ নিঃসন্দেহে শক্তিশালী হবে। তাহলে ব্রিটিশদের পক্ষে ভারতীয়দের শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিকে উপেক্ষা করা আদৌ সম্ভব হবে না। ফলে শুরু হয় জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে সংগতি বিধানের প্রচেষ্টা।


লখনৌ চুক্তি স্বাক্ষর:-

   জিন্নাহ এবং বালগঙ্গাধর তিলকের প্রচেষ্টায় ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের অধিবেশন লখনৌ শহরের অনুষ্ঠিত হয়। আর শ্রীমতি অ্যানি বেসান্তের  উদ্যোগে দুটি সংস্থাই সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে পারস্পরিক সমঝোতার নীতি গ্রহণ করে। ঐ নীতির উপর ভিত্তি করেই ডিসেম্বর মাসে উভয় দলের মধ্যে একটি যুক্ত কর্মসূচি এবং আইনসভা নির্বাচন ও আসন বন্টন সম্পর্কে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিই লখনৌ চুক্তি (১৯১নামে খ্যাত।


লখনৌ চুক্তির শর্তাবলী:-

   ১) কংগ্রেস ১০ বছরের জন্য প্রতিটি প্রদেশে মুসলিম লীগের আলাদা নির্বাচনের দাবি মেনে নেবে এবং তাঁরা কেবলমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোটেই নির্বাচিত হবেন।

   ২)  কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভায় এক-তৃতীয়াংশ মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্ত হবে।

   ৩)  মুসলিম লীগ কংগ্রেসের স্বরাজের আদর্শ মেনে নেবে।

   ৪)  আইনসভার তিন-চতুর্থাংশ সদস্যকে নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে।

   ৫)  Sandals ও মুসলিম লীগ উভয়ে যুগ্মভাবে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করবে।

   ৬)  কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ একযোগে ব্রিটিশের কাছে শাসন সংস্কারের দাবি জানাবে।


লখনৌ চুক্তির গুরুত্ব:-

   কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে স্বাক্ষরিত লখনৌ চুক্তির গুরুত্ব অসীম।

   ১)হিন্দু মুসলিম ঐক্য গঠন:- এই চুক্তি ইংরেজের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের ওপর আঘাত হানে। এ প্রসঙ্গে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন- "হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভাবগত ঐক্যের চূড়ান্ত নিদর্শন এই চুক্তি।”

   ২) তিলক ও জিন্নার  মর্যাদা বৃদ্ধি:- এই চুক্তির রূপকার হিসেবে বালগঙ্গাধর তিলক ও মহম্মদ আলী জিন্নার জাতীয় নেতা হিসেবে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।

৩)  আলাদা আলাদা স্থায়িত্ব:-এই চুক্তিতে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের পৃথক সার্থকে পরক্ষে স্বীকার করা হয়েছিল। মহম্মদ দুরানির মতে- "লখনৌ চুক্তি দ্বারা কংগ্রেস স্বীকার করে নেয় যে, হিন্দু ও মুসলমানরা দুটি পৃথক জাতি।”


মন্তব্য:-

   লখনৌ চুক্তির মাধ্যমে ভারতের দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংহতি সাধন সম্ভব হয়েছিল। ফলে ব্রিটিশ সরকার দারুন অস্বস্তির মধ্যে পড়ে। তবে একথাও ঠিক যে, লক্ষ্নৌ চুক্তির মাধ্যমে ধর্মকে রাজনীতির মধ্যে টেনে এনে ভারতের রাজনীতিতে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার যে বীজ রোপিত হয় তা আদৌ মঙ্গল জনক হয়নি। জাতীয় কংগ্রেস লখনৌ চুক্তির মাধ্যমে মুসলিম লীগের আলাদা নির্বাচনের দাবি মেনে নেওয়ায় প্রমাণিত হয় যে, হিন্দু-মুসলিম দুটি আলাদা জাতি এবং তাদের স্বার্থও আলাদা।

Post a Comment

0 Comments