Ticker

6/recent/ticker-posts

গান্ধী আরউইন চুক্তি (১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ৫ই মার্চ)

 


পটভূমি:-

১) প্রথম গোল টেবিল বৈঠকের ব্যর্থতা:- সাইমন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে প্রথম গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সাম্প্রদায়িক মতানৈক্য ও জাতীয় কংগ্রেসের অনুপস্থিতির দরুন প্রথম গোল টেবিল বৈঠক ব্যর্থ হয়। জাতীয় কংগ্রেস মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু করে। এই আইন অমান্য আন্দোলনকে স্তব্দ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার, জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে। 

   কিন্তু এর পরেও আন্দোলনের তীব্রতা দেখে ব্রিটিশ সরকার অনুভব করে যে, কংগ্রেসের সাহায্য ছাড়া এই উদ্ভূত সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাই বড়লাট গান্ধীজী সহ অন্যান্য নেতাদের মুক্তি দিয়ে (২৬ শে জানুয়ারি ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে) মৈত্রী পটভূমি প্রস্তুত করে।

২) বৃহৎ শিল্পপতিদের চাপ:- বৃহৎ বণিক ও শিল্পপতি গোষ্ঠী পরবর্তী গোলটেবিল বৈঠক গুলিতে গান্ধীকে যোগদান করার আহ্বান জানান।

    কারণ ব্রিটিশ সরকার শুল্ক আদায়ের ব্যাপারে নমনীয় নীতি গ্রহণ করেছিল। তাই এই শিল্পপতি গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে ঠাকুরদাস, পুরুষোত্তম দাস এলাহাবাদ গিয়ে গান্ধীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে আরউইনের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য অনুরোধ জানান।

   অন্যদিকে বিলাতি পন্য বয়কট এর প্রভাবে ইংল্যান্ডের বস্ত্র শিল্পের ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা আরউইনের উপর আপোষ মিমাংসার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন।

৩) উদারপন্থী ও মুসলিম নেতাদের আপস মনোভাব:- উদারপন্থী নেতৃবৃন্দ তেজ বাহাদুর সপ্রু এম. আর. জয়াকারের মাধ্যমে বড়লাট লর্ড আরউইনকেও কংগ্রেসের সঙ্গে আপোষ মিমাংসায় আসার জন্য অনুরোধ জানায়। শুধু তাই নয়, এই উদারপন্থী নেতারা গান্ধীজিকেও আরউইনের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসার অনুরোধ জানান।

    এসবের পাশাপাশি জাতীয়তা বাদী মুসলিমদের অধিকাংশই লীগের প্রভাবে আইন অমান্য আন্দোলন থেকে দূরে সরে থাকায় তারাও মিটমাট চান।

ফলস্বরূপ, দীর্ঘ ১৫ দিন আলোচনার পর রাজধানী দিল্লিতে ১৯৩১ সালের ৫ ই মার্চ "গান্ধী আরউইন চুক্তি” স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিকে "দিল্লি চুক্তি” ও বলা হয়।

গান্ধী আরউইন চুক্তির শর্তাবলী:-

১) সরকার দমনমূলক আইন ও অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহার করে নেবে।

২)  সহিংস আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক বন্দীদের ছাড়া অন্যান্য সমস্ত রাজবন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে।

৩)  সত্যাগ্রহে অংশ নেওয়া আন্দোলন কারীদের বায়েজাপ্ত সম্পত্তি ফেরত দেওয়া হবে।

৪) অনাদায়ী জরিমানা সরকার মকুব করবে।

৫)  সমুদ্রতীরবর্তী অধিবাসীদের নিজেদের খাওয়ার জন্য নুন তৈরি করা যাবে।

৬)  বিলাতী মদ ও কাপড়ের দোকানে শান্তিপূর্ণভাবে পিকেটিং করা বেআইনি নয়।


এর বিনিময়ে গান্ধীজী প্রতিশ্রুতি দেন-

ক) আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

খ) দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে গান্ধীজী যোগদান করবেন।

গ) আন্দোলনে অংশ গ্রহণকারীরা বিদেশি পণ্য বর্জন করবে না।

   এই চুক্তিতে অবশ্য একথা  স্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয় যে ভারতের প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা সমস্ত দায়িত্ব ও ক্ষমতা ব্রিটিশ সরকারের থাকবে।


গান্ধী আরউইন চুক্তির গুরুত্ব:-

    যদিও সুভাষচন্দ্র, মতিলাল নেহেরু, জহরলাল নেহেরু সহ অনেক তরুণ নেতা এই চুক্তি সম্পাদনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ভগৎ সিং, রাজগুরু বা অন্যান্য বন্দিদের মুক্তির ব্যাপারে কোন ভূমিকা গ্রহণ না করার জন্য গান্ধীজী সমালোচিত হন। তবুও এই চুক্তির গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।

   এই চুক্তির বলেই রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জাতীয় কংগ্রেস যে ব্রিটিশ সরকারের স্বীকৃতি লাভ করে একথা বললে অত্যুক্তি হয় না। একথা স্বীকৃত হয় যে, ভারতে সুষ্ঠুভাবে শাসন পরিচালনা করতে হলে ব্রিটিশ সরকার ছাড়াও আরেকটি শক্তি আছে যার সঙ্গে বোঝাপড়া না করলে চলবে না। আর সে শক্তি হল ভারতের জাতীয় কংগ্রেস।

    ফলে কংগ্রেসের মর্যাদা বহুগুণ বেড়ে যায়। কাজেই একথা স্বীকার করতেই হবে যে, গান্ধী আরউইন চুক্তি ভারতের ইতিহাসে এক অভিনব ঘটনা।

Post a Comment

0 Comments