ভূমিকা:-
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে করাচিতে কংগ্রেসের এক বিশেষ অধিবেশনে গান্ধী আরউইন চুক্তি অনুমোদন লাভ করে। তারপর স্থির হয়, গান্ধীজী একক প্রতিনিধি হিসাবে কংগ্রেসের পক্ষে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে গান্ধীজী লন্ডন অভিমুখে যাত্রা করেন। পন্ডিত মদনমোহন মালব্য এবং শ্রীমতি সরোজিনী নাইডু তাঁর সঙ্গী হন।
এদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকের অন্তবর্তীকালে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা পুনর্গঠিত হয়। শ্রমিক দলের সরকারের পরিবর্তে সেখানে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠিত হয়।
ম্যাকডোনাল্ড প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বহাল থাকলেও প্রকৃতপক্ষে রক্ষণশীল দলের সরকারই প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারত সচিবের পদ গ্রহণ করেন রক্ষণশীল দলের নেতা স্যার স্যামুয়েল হোর্। এই পরিবর্তনের ফলে ব্রিটিশ সরকারের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি আগের চেয়ে অনুদার হয়ে ওঠে।
আলোচ্য বিষয়:-
১) ভবিষ্যৎ ভারতের স্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র গঠন।
২) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা।
দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে গান্ধীজীর দাবি:-
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই সেপ্টেম্বর থেকে ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত গান্ধীজী ওই বৈঠকের অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন। তিনি বৈঠকে যে দাবী করেছিলেন তা হল-
১) স্বায়ত্তশাসনের:- সময় নষ্ট না করে ভারতে এখনই পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন চালু করতে হবে।
২) কংগ্রেসকে জাতীয় স্বীকৃতি:- কংগ্রেস কোন সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান নয়, কংগ্রেস ভারতবর্ষের জাতীয় প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, রাজস্ব, প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক, সংখ্যালঘুদের দায়িত্ব, সবকিছুই লোকায়ত সবকিছুই সরকারের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। ঐ সমস্ত বিষয়ে গভর্নর জেনারেলের বিশেষ ক্ষমতার তিনি তীব্র বিরোধিতা করেন।
৩) ব্রিটিশ রাষ্ট্র গোষ্ঠী পরিত্যাগ:- প্রয়োজন হলে ভারত কমনওয়েলথ বা ব্রিটিশ রাষ্ট্রপতি পরিত্যাগ করতে পারবে।
৪) সম মর্যাদার দাবি:- ভারতীয় ও ব্রিটিশ নাগরিক সমমর্যাদার অধিকারী। তাই ভারতীয়দের হাতে শাসন বিষয়ক দায়িত্ব তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের দ্বিধান্বিত হওয়ার কোনো যুক্তি নেই।
দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার কারণ:-
বৈঠকে বিভিন্ন ভারতীয় দলের প্রতিনিধিরা গান্ধীজীর দাবিকে শক্তিশালী করে তুলতে মোটেই সাহায্য করেননি। বরং সংখ্যালঘু সমস্যার আলোচনা ও সমাধানের বিষয়ে এক অচল অবস্থার সৃষ্টি করে তাঁরা গান্ধীজীর দাবিকে দুর্বল করে দেয়।
উপরন্তু সাম্প্রদায়িকতাবাদী কোন কোন ভারতীয় নেতা শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের সঙ্গে একজোট হয়ে সাম্প্রদায়িক প্রশ্নে কংগ্রেসের সঙ্গে কোন প্রকার সমঝোতায় আসতে অস্বীকার করেন। তাঁরা বলেন, সংখ্যালঘু সমস্যা সমাধানের পরেই দায়িত্বশীল শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা আসবে, তার আগে নয়।
ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের এই মতবিরোধের পূর্ণ সুজন গ্রহণ করে। ম্যাকডোনাল্ড জোরের সঙ্গেই জানান, সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানে অসামর্থই ভারতের শাসনতন্ত্র রচনার পথে প্রধান বাধা। ভাই শেষ পর্যন্ত বৈঠকের সভাপতি হিসেবে ম্যাকডোনাল্ডের উপহার সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধানের ভার ছেড়ে দিয়ে বৈঠকের অধিবেশন স্থগিত হয়।
এইভাবে ব্রিটিশ সরকারের চাতুরিতে ও ভারতীয় প্রতিনিধিদের আচরণের হতাশ গান্ধীজী শেষ পর্যন্ত শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন(২৮ শে ডিসেম্বর, ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ)।
মন্তব্য:-
দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকের ব্যর্থতা সম্পর্কে সুভাষচন্দ্র বলেন যে, ১০৭ জন প্রতিক্রিয়াশীল সদস্যবিশিষ্ট সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী গান্ধীজী ছিলেন সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ। তাঁর একার পক্ষে বৈঠকের সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল না। গান্ধীজী খালি হাতে ফিরে আসায় মুসলিম লীগ আনন্দিত হয়। কেননা এতে সংখ্যালঘু সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।
0 Comments