Ticker

6/recent/ticker-posts

প্রথম গোল টেবিল বৈঠক (১২ ই নভেম্বর ১৯৩০-১৯ শে জানুয়ারি ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ)

 


পটভূমি:- 

   ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে মে সাইমন কমিশন রিপোর্ট পেশ হয়। কিন্তু এই রিপোর্ট ভারতীয় কোন রাজনৈতিক দলকেই খুশি করতে পারেনি। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে মতিলাল নেহেরু তাঁর রিপোর্ট পেশ করেন। 

   ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে ডিসেম্বর কলিকাতায় বার্ষিক অধিবেশনে নেহেরু রিপোর্ট আলোচনার সময় সুভাষচন্দ্র বসু ও জহরলাল নেহেরু রিপোর্টে প্রস্তাবিত ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনকে কংগ্রেসের আদর্শরূপে গ্রহণ করতে তীব্র আপত্তি করেন এবং পূর্ণ স্বরাজ কিংবা স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করেন। 

  এই উদ্দেশ্যে তাঁরা "ইন্ডিপেন্ডন্স লীগ” নামে একটা সংগঠন স্থাপন করেন। নেহেরু রিপোর্ট অনুমোদন করে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস কার্যকরী করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি কংগ্রেস আহ্বান জানান।

  জাতীয়তাবাদী দাবির চাপে পড়ে বড়লাট লর্ড আরউইন(Lord Irwin) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে ঘোষণা করেন যে, সাইমন কমিশনের রিপোর্ট আগে প্রকাশিত হোক, তারপর লন্ডনে সবাইকে নিয়ে একটা গোল টেবিল বৈঠক(Round Table Conference) করে ভারতের জন্য নতুন সংবিধান রচনা করা যাবে।


বৈঠক আহ্বান:-

   কংগ্রেস তার আন্দোলনের নীতিতে  অবিচল থাকে। ১৯২৯ সালের ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেস পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানায় এবং ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস হিসাবে। ঐ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে গান্ধীজীর নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং মার্চ মাসে শুরু হয় ডান্ডি অভিযান।

  ফলে কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অন্যান্য ভারতীয় নেতৃবৃন্দ ও গোষ্ঠিকে সন্তুষ্ট করতে ১৯৩০ সালের ১২ ই নভেম্বর বিলাতে একটি গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেন।


বৈঠকের উদ্দ্যেশ্যে:-

 ১) ১৯৩০ সালের জুন মাসে প্রকাশিত সাইমন কমিশনের প্রতিবেদন আলোচনা করা।

২)  ভারতের ভবিষ্যৎ শাসন সংস্কার সম্পর্কে এক সর্বসম্মত রূপরেখা করা।


বৈঠকে  যোগদানকারীগন:-

   বৈঠকে আমন্ত্রিত হন ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১৬ জন সদস্য, ভারতীয় রাজন্যবর্গের ১৬ জন প্রতিনিধি এবং ব্রিটিশ শাসিত ভারতের ৫৭ জন প্রতিনিধি। 

  ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী শ্রমিক দলের নেতা র‌্যামসে ম্যাকডোনাল্ড বৈঠকের পৌরোহিত্য করেন। রাজা পঞ্চম জর্জ বৈঠকের উদ্বোধন করেন। উদারপন্থী নেতা তেজ বাহাদুর সপ্রু, জয়াকার, মুসলিম নেতা জিন্না, আগা খাঁ, হিন্দু মহাসভার  মুঞ্জে,তপশিলি নেতা বি. আর. আম্বেদকর প্রমূখ গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন। কংগ্রেস ছাড়া ভারতের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই ওই বৈঠকে যোগদান করেন।


বৈঠকে বিভিন্ন প্রস্তাব:- 

বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি সাংবিধানিক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। যেমন- 

১)  ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠন।

২) এক একটি প্রদেশে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা।

৩)  এই বৈঠকেই জিন্না তাঁর ১৪ দফা দাবি নিয়ে সরব হন।

৪)  শিখরা পাঞ্জাবে শতকরা ৩০ ভাগ আসনের দাবি উত্থাপন করে।

৫) হিন্দুরা যৌথ নির্বাচনের দাবি জানায়।


ফলাফল:-

  ১) বিভিন্ন নেতা নিজ নিজ গোষ্ঠীর স্বার্থে দাবি উত্থাপন করেন। বৈঠকের শর্তগুলি কিছু ছিল পরস্পরবিরোধী এবং কিছু জাতীয় স্বার্থবিরোধী।

২) দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর কর্তৃপক্ষের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, কংগ্রেসের অনুপস্থিতিতে এই জাতীয় বৈঠক কখনোই সাফল্য লাভ করতে পারে না। তাই শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সহযোগিতা কামনা করে ১৯৩১ সালের ১৯শে জানুয়ারি  বৈঠকের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়।   অর্থাৎ প্রথম গোল টেবিল বৈঠক নিষ্ফল ভাবে শেষ হয়।

Post a Comment

0 Comments